রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ফৌজদারি আইন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০১৩: একটি আলোকপাত


গত ফেব্রুয়ারী মাসের ৩ তারিখে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী স্বাক্ষর করেন নতুন এক অধ্যাদেশ এর নাম হল ফৌজদারি আইন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০১৩ (Criminal Law (Amendment) Ordinance 2013) এই স্বাক্ষরের ফলে এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকার দেশের ফৌজদারি আইনে সুদূরপ্রসারী সংশোধন নিয়ে আসে সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে মানবাধিকার কর্মী, মহিলা-অধিকার কর্মী ও সাধারন মানুষের দেশজোড়া আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু লক্ষ্যণীয়ভাবে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালহিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত প্রভাবশালী মানবাধিকার সংগঠন এই অধ্যাদেশকে নাকচ করেছে সংসদের বাজেট অধিবেশনে এই আইনকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তারা সাংসদদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে

সংস্থা দুটির মতে যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত আইনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির প্রতিফলন ঘটা উচিত ছিল প্রয়োজন ছিল বিচারপতি ভার্মা কমিটির সুপারিশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা নতুন আইনে এর কোনটাই পুরোমাত্রায় নেই

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নির্দেশক মিনাক্ষী গাঙ্গুলী সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছেন, যৌন-নিপীড়ন সম্পর্কিত ভারতের ঔপনিবেশিক আইন শেষ পর্‍যন্ত সংশোধন করা হলেও এই নতুন অধ্যাদেশ ভুক্তভোগীদের জন্য উপযুক্ত প্রতিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা দিতে বিফল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সাংসদদের এমন একটা আইন প্রণয়ন করা উচিত যে আইন এই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলোকে উপযুক্ত গুরুত্ব দেয়।

Amnesty International
গত ডিসেম্বর মাসে দিল্লিতে ২৩ বছরের এক মহিলার গণধর্ষণ ও মৃত্যুর পর থেকে যৌন-নিপীড়ন সম্পর্কিত আইনের সংস্কার জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠেছিল। ভারত সরকার সুপ্রীম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জে. এস. ভার্মার নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি গঠন করে। যৌন-নিপীড়ন বিরোধী আইনকে আরো শক্তিশালী ও কার্‍যকর করে তোলার উদ্দেশ্যে আইন-সংস্কারের ব্যাপারটি বিবেচনা করে দেখার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় এই কমিটিকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নতুন অধ্যাদেশে এই কমিটির গুরুত্বপুর্ণ কয়েকটা সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিশেষকরে পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও যৌন- নির্‍যাতনকে নিজের শরীরের উপর মহিলাদের সম্পূর্ণ মালিকানার অধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করার সুপারিশগুলো বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে।

এমনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যালের ভারত রাষ্ট্রের প্রধান  নির্দেশক জি. অনাথাপদ্মনাভন বলেন, আইন পাশ করার আগে সংসদে এই সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হওয়া উচিত আর আইনে কোন সংশোধন করতে হলে ভার্মা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ এবং মহিলা-অধিকার কর্মীদের মতামত চেপে গেলে চলবে না।

মানবাধিকার আন্দোলনকারীদের মতে সরকারের জারী করা অধ্যাদেশ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে খাপ খায় না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সব ধরণের যৌন-উত্পীড়নকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তির বিধান দেওয়া হয়নি এই অধ্যাদেশে। তা ছাড়া, এতে কিছু অস্পষ্ট ও বৈষম্যমূলক ধারা রয়েছে। যৌন-হামলার কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যূদণ্ডের বিধানও রয়েছে যা মানবাধিকার নীতির পরিপন্থী। যৌন অপরাধে অভিযুক্ত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার না চালানোর যে আইনি ব্যবস্থা ছিল এই অধ্যাদেশ সেই ব্যবস্থাকে আগের মতই বহাল রেখেছে। বয়ঃপ্রাপ্তির সময় সীমা বাড়িয়ে দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের কোন সাহায্য নয় বরং ক্ষতিই করবে এই অধ্যাদেশ। মানুষ-পাচারের (Trafficking) এমন এক সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যাতে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের স্বেচ্ছাকৃত যৌন-কর্মও এর আওতায় এসে যায়।

সংজ্ঞা সমস্যা

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে এই অধ্যাদেশে প্রদত্ত কয়েকটা সংজ্ঞা যৌন-নিপীড়ন থেকে মহিলাদের সঠিক সুরক্ষা দিতে পারবে না। মহিলাদের শরীরের উপর তাদের নিজেদের সম্পূর্ণ অধিকার ও শারীরিক অখণ্ডতা ও সংহতি অক্ষুন্ন রাখার অধিকারের ধারণার বদলে এই অধ্যাদেশে ধরে রাখা হয়েছে আগের যুগে অপরাধের সংজ্ঞা নিরূপণ করতে ব্যবহৃত হত কিছু ধারণা। যেমন, সতীত্বের অপমান বা শ্লীলতাহানির (“insults” or “outrages” to women’s “modesty”) ধারণার মত বৈষম্যমূলক ও পিতৃতান্ত্রিক ধারণা। এতে করে ভারত সরকার প্রকারান্তরে তার আন্তর্জাতিক আইনি দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করল। লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যমূলক সব আইন সংশোধন করে দেশের আইনকে সাম্যভিত্তিক করে তুলতে ভারত সরকার বাধ্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে।

যৌন অপরাধের (“sexual assault”) সংজ্ঞায় প্রবেশক ও অপ্রবেশক (penetrative and non-penetrative) যৌন-নিপীড়নের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয় নি। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, পুরো যৌন সঙ্গম ও শুধু বুকে হাত ছোঁওয়ানোর জন্য একই শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। ছোট ও বড় অপরাধের একই শাস্তি হলে অপরাধীরা স্বাভাবিকভাবেই ছোট অপরাধে থেমে না থেকে বড় অপরাধটাও আঞ্জাম দিতে চাইবে। 

দাম্পত্য ধর্ষণের অসম্পূর্ণ স্বীকৃতি

মহিলাদের বৈবাহিক স্থিতির (বিবাহিত না অবিবাহিত) উপর ভিত্তি করে এই অধ্যাদেশ তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক বিধান দিয়েছে এবং আইনের চোখে সকলেই সমান বলে গণ্য হওয়ার মৌলিক মানবাধিকারও লংঘন করেছে। সংশোধিত ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার অধীনে কোন মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে সাধারনত যৌন নিপীড়নের কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন না। অবশ্য মহিলা যদি আদালতের আদেশ বা সামাজিক রীতি কিংবা প্রথামতে আলাদা বসবাস করেন তা হলে তিনি এই রকম ঘটনার অভিযোগ আনতে পারেন, অন্যথায় নয়।

অনেক আন্তর্জাতিক চুক্তি (treaties) ও ঘোষনাপত্র মহিলাদের সমান অধিকারের অঙ্গ হিসাবে যৌন স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই অধিকার-বলে যৌনতার ক্ষেত্রে মহিলাদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে ইচ্ছা না থাকলে স্বামীর সাথে যৌন মিলনে অস্বীকার করতে পারেন তারা। ভারত এইসব চুক্তি ও ঘোষনাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। সেই হিসাবে ভারত সরকারের দায়িত্ব রয়েছে মহিলাদের এই অধিকারের সুরক্ষা প্রদান ও উপভোগের সুবিধা করে দেওয়ার। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ফৌজধারী আইনের মাধ্যমে মহিলাদের এই অধিকারকে সুরক্ষিত করা যেতে পারে।

বর্ধিত শাস্তি

যৌন আক্রমণের ফলে ভুক্তভোগীর মৃত্যু হলে অথবা স্থায়ীভাবে চেতনারহিত (“persistent vegetative state” ) হয়ে গেলে এবং কিছু ক্ষেত্রে একাধিক ঘটনায় জড়িত দোষীদের জন্য এই অধ্যাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। এমনেস্টি ইন্টারন্যাশন্যাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত সংগঠনসহ সকল মানবাধিকার আন্দোলনকারী কোন অবস্থায়ই মৃত্যুদণ্ডের সমর্থন করেন না। মানবাধিকার কর্মীদের মতে মৃত্যুদণ্ড হল চরম নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অমার্‍যাদাকর শাস্তি। বিচার ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রের অন্য কোন অংগের ভুলের ফলে কেউ একবার এই দণ্ড ভোগ করলে তার পরিণাম কোনমতেই আর বদলানো যায় না। মৃত্যুদণ্ড জীবনের অধিকারের লংঘনের সামিল। পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্র ইতিমধ্যে এই শাস্তি বিলোপ করেছে।
শাস্তির মাত্রার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে আইন প্রণেতাদের উচিত অপরাধীদের শাস্তি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান করা। এটা করা যেতে পারে আইন প্রনয়ণের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে সংস্কার করে যাতে যৌন অপরাধের সব ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়, সঠিকভাবে তদন্ত করা হয় ও বিচার করা হয়।

পুলিশ ও সেনা বাহিনীর অব্যাহতি
 
দেশের বিচার ব্যবস্থায় কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে যা যৌন অপরাধের ক্ষেত্রেও পুলিশ ও সেনা বাহিনীর লোকদের আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখে দিয়েছে। নতুন অধ্যাদেশও সেই ব্যবস্থাকে আগের মতই রেখে দিয়েছে। বর্তমান ব্যবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের বিনা অনুমতিতে পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানো যায় না। বাস্তবে এই অনুমতি প্রায় কখনোই দেওয়া হয় না। ফলে গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ ও সেনা জওয়ানদের প্রকৃতপক্ষে আইনের হাত থেকে আইন করে অব্যাহতি দিয়ে রাখা হয়েছে (legal immunity)। ১৯৫৮ সালের সেনা বাহিনী (বিশেষ ক্ষমতা) আইনেও (the Armed Forces (Special Powers) Act) এই ব্যবস্থা রয়েছে। ভার্মা কমিটি এই ধরণের যাবতীয় ব্যবস্থার বিলোপ করার সুপারিশ করেছেন। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের এই দীর্ঘসূত্রী প্রক্রিয়ার জন্য ভারতের পুর্বত্তোর অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর এবং মাওবাদী অধ্যুসিত অঞ্চলের ধর্ষিতাদের প্রতি মারাত্মক অন্যায় হচ্ছে।

মিনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ভারতের আইন পুলিশ ও সেনা সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যৌন অপরাধ করার যে বিশেষাধিকার দিয়েছে তা কোনমতেই আর বজায় রাখা উচিত নয়। সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর জন্য সরকারের অনুমতির প্রয়োজনীয়তা যৌন অপরাধের ভুক্তভোগীদের ন্যায় পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।

Human Rights Watch
যৌনতায় সম্মতি দেওয়ার অধিকার লাভের বয়স

২০১২ সালে প্রণীত শিশুদের যৌন অপরাধ থেকে সুরক্ষা প্রদান আইনের (The Protection of Children from Sexual Offences Act) মাধ্যমে যৌন সঙ্গমে সম্মতি দেওয়ার অধিকার লাভের বয়স ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছে। ভার্মা কমিটি সুপারিশ করেছে যে ভারতীয় ফৌজদারী দণ্ডবিধিতে এই বয়স আগের জায়গায় নিয়ে গিয়ে ১৬ করা হোক। আইনের মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট বয়স চিহ্নিত করে রাখা প্রয়োজন যে বয়সের নীচের ছেলে মেয়েদের বিষয়টা ভাল করে বুঝে ওঠার ক্ষমতা নেই তাদের সম্মতিকে অর্থহীন বিবেচনা করার জন্য। এই রকম ছেলে মেয়েদের সাথে যৌন সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা প্রয়োজন। কিন্তু এমন্যাস্টি ইন্টারন্যাশন্যালহিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আইন প্রণয়ন কালে লক্ষ্য রাখতে হবে নিজেদের যৌন আচরণের ক্ষেত্রে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিশোর কিশোরীদের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা ও পরিপক্কতা এবং উভয়পক্ষের বয়সের পার্থক্য,আর দূর করতে হবে অনুপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা।  আইন ব্যবস্থা কিশোর কিশোরীদের সাহায্য করা উচিত যাতে তারা জেনে বুঝে ও দায়িত্বের সাথে নিজেদের যৌনতাকে ব্যবহার করতে পারে। যাদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন করা হল আইন যাতে শেষে তাদের শাস্তি না দেয় তার প্রতি আইন প্রণেতাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।

মানুষ পাচারের অপরাধের সাথে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বেচ্ছাকৃত যৌনকর্মকে মিলিয়ে ফেলার সম্ভাবনা

উপরোক্ত সংগঠন দুটির মতে নতুন অধ্যাদেশে মানুষ পাচারের অপরাধের সাথে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বেচ্ছাকৃত যৌনকর্মকে তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। এই অধ্যাদেশ মানুষ পাচারের অপরাধের (“trafficking”) একটা নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে। এই সংজ্ঞা মতে মানুষ পাচারকারী হল সেই ব্যক্তি যে শোষণের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে জোর করে, ভয় দেখিয়ে, ভাওতা দিয়ে, অপহরণ করে, প্রলোভন দেখিয়ে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেহব্যবসার পেশায় নিয়ে আসে, আশ্রয় দেয়, স্থানান্তর করে বা নিজে গ্রহণ করে। এর সাথে এও বলা হয়েছে যে ‘‘শোষণ বলতে দেহব্যবসা বা অন্য ধরণের যৌন শোষণও বুঝতে হবে। এর পর জুড়ে দেওয়া হয়েছে, মানুষ পাচারের অপরাধ নিরূপণ করতে ভুক্তভোগীর সম্মতি বিবেচ্য নয়। মানবাধিকারের দৃষ্টিতে বলতে গেলে বলতে হয় এক দিকে যেমন জোর করে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে ও এই অপরাধের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সম্মতির কথা বলে বিবাদী যাতে নিজের পক্ষে যুক্তি দিতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে, অন্য দিকে নতুন অধ্যাদেশে ব্যবহৃত ভাষা আমাদেরকে ঝুঁকির মুখে এনে ফেলেছে। এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের স্বেচ্ছাকৃত যৌনকর্মকে জোর করে দেহব্যবসায় লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে মানুষ পাচারের অপরাধের (trafficking into forced prostitution) সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলা হতে পারে।

স্বেচ্ছা প্রণোদিত সমকামী যৌন সম্পর্ক

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা স্বেচ্ছা প্রণোদিত সমকামী যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। ২০০৯ সালের এক রায়ে দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে স্বেচ্ছা প্রণোদিত সমকামী যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গণ্য করলে সংবিধান প্রদত্ত সাম্যের অধিকার, বৈষম্যহীনতার অধিকার, মর্‍যাদাপূর্ণ জীবন ও নিজস্ব গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার লংঘিত হয়। তা সত্তেও নতুন অধ্যাদেশের দ্বারা এই আইনকে বিলোপ করা হয়নি।

নয়ুন অধ্যাদেশে এই সব মারাত্মক ত্রুটি লক্ষ্য করে এমন্যাস্টি ইন্টারন্যাশন্যালহিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারতের সংসদদের কাছে এটি প্রত্যাখ্যান করার আহবান জানিয়েছে। সেই সাথে মানবাধিকারের আইনের সাথে মিল রেখে ফৌজদারি আইন সংশোধন করার জন্য সংসদে নতুন বিল পেশ করার অনুরোধ জানিয়েছে সরকারকে।

রবিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৩

লিলিথ, তুমি এখনও আসছ না কেন?


লিলিথ, তুমি এখনও আসছ না কেন?
দিন এলো, তুমি এলে না;
আর কতকাল রাত-চরা হয়ে থাকবে!

এই দেশে আজ তোমার বোনদের,
কোন বন্য জন্তু নয়, হায়েনা নয়,
তোমার আদম-সন্তান--
তার বাবা-ভাই-বন্ধুরাই
দিনের বেলায়, হাঁ দিনের বেলায়,
খাবলে খুবলে ছিঁড়ে ফেঁড়ে
নাড়ি-ভুড়ি বের করছে
শরীরের রক্ত গিলছে মদের মত
কাঁচা নারী-মাংস, রান্না না করেই,
খাচ্ছে আয়েশ করে।

লিলিথ, তোমার বোনেরা
আজ শুধু রাত নয়,
দিনের বেলায়ও কাঁদছে,
চোখের রক্তে গঙ্গা বইছে।

লিলিথ, ডেকে নাও তোমার সব বোনকে
তোমার দলে, হয়ে ওঠ ঘাতক।
এইবার যেন তুমি নও,
আদম-ই পালায় রাতের অন্ধকারে।